বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : স্টার অ্যাডহেসিভে কর্মরত কারও বেতন ৭ হাজার টাকার নিচে না বলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দাবি। সেই কোম্পানিতে উর্ধ্বতনদেরসহ কর্মকর্তা-শ্রমিকদের পেছনে বেতন ও মজুরিবাবদ মাসিক গড় ৬ হাজার টাকা ব্যয় দেখিয়েছে। প্রসপেক্টাসে এমন তথ্য দেখিয়ে শেয়ারবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করতে যাচ্ছে স্টার অ্যাডহেসিভ। যেটাকে বাস্তবতার সঙ্গে কোন মিল নেই বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, কোন কোম্পানিতে যদি সর্বনিম্ন মাসিক বেতন ৭ হাজার টাকা হয়, তাহলে ওই কোম্পানির উর্ধ্বতনদের কারনে গড় বেতন তার চেয়ে বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনভাবেই সর্বনিম্ন বেতনের থেকে গড় বেতন নিচে নেমে আসার সুযোগ নেই। যদি কেউ এমনটি দেখায়, তাহলে নিশ্চয় কোথাও ভুল হয়েছে।
প্রসপেক্টোসে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ি, স্টার অ্যাডহেসিভে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেতন ও মজুরিবাবদ মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৭৫৩ টাকা। এরমধ্যে সর্বোচ্চ বেতনধারী ৫জন পেয়েছেন ৪১ লাখ ৬৯ হাজার ৮২০ টাকা। বাকি ৮০ লাখ ৪৩ হাজার ৯৩৩ টাকা পেয়েছেন ১১০ জন। যারা মাসিক গড়ে ৬০৯৩ টাকা করে বেতন-মজুরি পেয়েছেন।
এই গড় ৬০৯৩ টাকা আরও নিচে নেমে আসবে, যদি ওই ৫ জনের পরের অবস্থানে থাকা ব্যক্তিদের বেতনাদি বাদ দিয়ে হিসাব করা হয়। এভাবে যত উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বেতনাদি বাদ দিয়ে হিসাব করা হবে, ততই গড় বেতনাদি কমে আসবে।
অথচ বিএসইসিতে ইস্যু ম্যানেজারদের সঙ্গে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ক্যাপিটাল রেইজিং বিভাগের দায়িত্বে থাকা বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছিলেন, প্রসপেক্টাসে যদি মোট বেতনাদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারি দিয়ে ভাগ করে মাসিক গড় ৭-৮ হাজারের নিচে চলে আসে, তাহলে বুঝতে হবে সমস্যা আছে। নিশ্চয় সেখানে কারসাজির আশ্রয় নেওয়া হয়। এসব কোম্পানিকে কমিশন আইপিও দেবে না।
আরও পড়ুন…..
স্টার অ্যাডহেসিভে আজিজ আল কায়সারের নিয়োগে আইনের ব্যত্যয়
সাড়ে ৬ হাজার স্কয়ার ফিটের জমিতে ১৪৫০০ স্কয়ার ফিট আয়তনের ছাউনি-কাঠামো
শেয়ারবাজারে আসার আগে আড়াই মাসে ২০ লাখ টাকার স্টার অ্যাডহেসিভ ১৫ কোটি
এ বিষয়ে শীর্ষ এক মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) বিজনেস আওয়ারকে বলেন, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ একটি কোম্পানিতে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের গড় বেতন ১০ হাজার টাকার নিচে হওয়ার সুযোগ নেই। নিচের পদে কর্মচারিরা যদি ৫ হাজার টাকা করেও পায়, তাহলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বেশি বেতনের কারনে গড়ে তা ১০ হাজার টাকার উপরে হবে। তাই কোন কোম্পানির প্রসপেক্টাসে যদি গড় বেতন ৬ হাজার টাকায় নেমে আসে, তাহলে অবশ্যই বুঝতে হবে সমস্যা আছে। হয়তো কর্মকর্তা-কর্মচারি বেশি দেখানো হয়েছে, অথবা ব্যয় কমিয়ে মুনাফা বেশি দেখানো হয়েছে।
গড় বেতনের বিষয়ে গত ২২ মার্চ স্টার অ্যাডহেসিভের অফিসে কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. জুলফিকার আলী, কোম্পানি সচিব আসলাম মিয়া ও পারটেক্স স্টার গ্রুপের হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্টের মো. শিব্বির হোসাইনের সঙ্গে সাক্ষাতে তারা বলেন, স্টার অ্যাডহেসিভে ৭ হাজার টাকার নিচে কারও বেতন নেই। যা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে যায়। তাহলে গড় বেতন ৭ হাজারের উপরে থাকা স্বাভাবিক হলেও ৬০৯৩ টাকা কেনো? এমন প্রশ্নে তারা বলেন, গড় হিসাব করাটা কঠিন। আমরা সবার বেতনাদি ব্যাংকের মাধ্যমে দেই। সব ডকুমেন্টস আছে। চাইলে আপনাকে দিতে পারি।
এদিকে স্টার অ্যাডহেসিভের প্রসপেক্টাসের ৬৬ পৃষ্টায় কোম্পানির কোন পরিচালক শেয়ারবাজারের সঙ্গে কোনভাবে জড়িত নয় ও অন্যকোন তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক নয় বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রসপেক্টাসে কোম্পানির চেয়ারম্যান তাবাসসুম কায়সার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিটি ব্যাংকের পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজ আল কায়সার সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্টার অ্যাডহেসিভের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজ আল কায়সার সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে এবং কোম্পানিটির চেয়ারম্যান তাবাসসুম কায়সার সিটি ব্যাংকের পরিচালক পদে থাকার পরেও শেয়ারাবাজারের সঙ্গে যুক্ত নেই বলে প্রসপেক্টাসের উল্লেখ করার বিষয়ে তারা বলেন, এ বিষয়টি ইস্যু ম্যানেজার বলতে পারবেন।
প্রসপেক্টাসের ১৫৮ পৃষ্টায় কোম্পানিটির ২০১৯-২০ অর্থবছরে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের (টার্ম লোন) বিপরীতে ৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকার সুদজনিত ব্যয় হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ১৩৯ পৃস্টায় ওই অর্থবছরে শুরুতে এবং শেষে কোন টার্ম লোন ছিল না।
দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ছাড়াই দীর্ঘমেয়াদি ঋণের সুদজনিত ব্যয়ের বিষয়ে তারা বলেন, ওটা স্বল্পমেয়াদি ঋণের সুদ হবে।
বিজনেস আওয়ার/২৮ মার্চ, ২০২২/আরএ